সদর উপজেলা (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
সম্প্রতি কক্সবাজার শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা। জেলায় উপজেলা হতে প্রতিদিন চার-পাঁচটি মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রমতে, সক্রিয় রয়েছে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। তবে মাঝে-মধ্যে কিছু সংখ্যক চোর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও দেখা যায় তাদের মধ্যে অধিকাংশই ভদ্র পরিবারের বখাটে সন্তান। আটকের সাথে-সাথেই আইন শৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে চোরকে ছাড়িয়ে নিতে মোটা অংকের মিশন নিয়ে তদবির শুরু করে অবৈধ কর্মকান্ডে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীরা।
তাই ওসব অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু মোটর সাইকেল চুরি নয়, এই সিন্ডিকেট সদস্যরা ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপরাধেও জড়িত থাকায় তাদের অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে, এমনটি জানিয়েছেন অনেকেই। তবে মোটর সাইকেল চোরদের আটকে পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযান চলমান থাকলেও অব্যাহত চুরির ঘটনায় গাড়ি মালিক ছাড়াও জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি সচেতন মহলের। পাশাপাশি চুরি হওয়া মোটর সাইকেল উদ্ধারে পুলিশের কাছে অভিযোগ অথবা মামলা করলেও অধিকাংশ মোটর সাইকেল উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সূত্র জানায়, জেলা জুড়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সাজিদ, বৈদ্যরঘোনা এলাকার সালাহউদ্দিন, পাহাড়তলীর সঞ্জয় বড়ুয়া, রাশেল, লাঘা, টেকপাড়ার বাপ্পি, পেশকার পাড়ার খালেক, গাড়ির মাঠের শরিফ, মনজুর, বাহারছড়া এলাকা থেকে রাসেল ওরফে ইমন খানসহ তার সিন্ডিকেটের অন্তত ১৫ জন সদস্য, নুনিয়াছড়ার করিম, লিংক রোড় মুহুরী পাড়ার মামুন, বিজিবি ক্যাম্প এলাকার সোলাইমান প্রকাশ সালমান, তারাবনিয়াছরা এলাকার সাজ্জাদ, জামাল, সিটি কলেজ পার্শ্ববর্তী এলাকার আমীর, রামু উপজেলার শ্রীকুল, মন্ডল পাড়া ও চা বাগান এলাকার মোটর সাইকেল সিন্ডিকেটের প্রধান মোস্তাক, রুবেল ও চিংকু, মহেশখালী উপজেলার নতুন বাজার এলাকার শীর্ষ মোটর সাইকেল চোর মোক্তার মিয়া ও চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা নাজমুল হুদা রিপন নেতৃত্বে প্রায় দুশতাধিক চোর সক্রিয় রয়েছে।
অন্যদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ বাহারছড়া থেকে আসা জেলার শীর্ষ মোটর সাইকেল চোর শাখাওয়াত নামের এক যুবক কক্সবাজার শহর ও শহরতলীতে স্থান ভেদে অবস্থান করে সাইকেল চুরি করে আসছে বলে। একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তার বিরুদ্ধে মোটর সাইকেল চুরি ও ইয়াবা কারবারসহ নানা অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, কুমিল্লা জজ কোটে তার বিরুদ্ধে ইয়াবার মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। একাধিক সুত্র জানিয়েছে, শাখাওয়াত সময় ভেদে নাম্বার প্লেইট পরির্বতন করে এক এক সময় এক এক মডেলের মোটর সাইকেল চালায় ও বিক্রি করে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের চিহ্নিত প্রভাবশালী পরিবারের কিছু বখাটে যুবকের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এ সখ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট করে শহরের অলিগলিতে মোটর সাইকেল চুরি ও ইয়াবা কারবার চালিয়ে আসছে। বর্তমানে তার নানা অপরাধের বিচরণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পর্যন্ত ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চুরি হওয়া কিছু মোটর সাইকেল উদ্ধার করা গেলেও বেশির ভাগের ক্ষেত্রে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওইসব মোটর সাইকেল চোরের দল চোরাইকৃত মোটর সাইকেলের রং এবং চেসিস নাম্বার পাল্টিয়ে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও জেলার বাইরে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করে। তাদের বেশির ভাগ সদস্য চোরাই মোটর সাইকেলের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। বিশেষ করে ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে টানাগাড়ি (নাম্বারবিহীন) আদান প্রদানে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বেশির ভাগই জড়িত ইয়াবা ব্যবসায়। অন্যদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, মোটর সাইকেল চোরদের আটক করতে মাঠে জোরালোভাবে কাজ করছে পুলিশের বিশেষ টিম।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, মোটর সাইকেল চুরিরোধে পুলিশ সব সময় মাঠে রয়েছে। এ লক্ষে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত পাহারা। শুধু মোটর সাইকেল নয়, যেকোনো অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ সজাগ রয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply